প্রবাসীদের ভোটাধিকার

রাজনীতি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য হলেও বিগত বছরগুলোতে তাদেরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়নি। অথচ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক।

বিগত জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের নেয়া রেমিট্যান্স শাটডাউন/ ব্লকেড আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যার ফলে ফ্যাসিবাদী মাফিয়া সরকার ছাত্র-জনতার কাছে নতি স্বীকার করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ বিজয়ের অংশীদার বাংলাদেশে বসবাসরত জনমানুষের সাথে সাথে প্রবাসী জনগণও। বস্তুতঃ যারা প্রবাসে থাকে তাদেরকে সর্বদাই শুনতে হয়—

১. বিদেশে বসে দেশের ব্যাপারে নাক না গলালেও চলবে

২. থাকো তো প্রবাসে , দেশের সমস্যা তোমরা কি বুঝবা!

৩. তোমরা বিদেশে বসে আরাম আয়েশে থাকো আর ফেইসবুকে লম্বা লম্বা কথা বলো, পারলে দেশে এসে রাজনীতি করো

এসব উদ্দেশ্যপূর্ণ কথা বলে প্রবাসীদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে বছরের পর বছর। অথচ পৃথিবীর যে প্রান্তে যে দেশেই বাংলাদেশীরা থাকুক না কেন, তাদের অন্তর বাংলাদেশের জন্য কাঁদে প্রতিক্ষণে। তাদের মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হলে দেশ ও জাতি উপকৃত হতে পারে।

চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান নয় কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর এই উক্তিকে বিবৃত করে বলতে চাই—সশরীরে নেই দেশে, তাই বলে কি মুখবন্ধ থাকবে বিদেশে বসে? দেশের সকল বৈষম্য এবং অনিয়ম দূরীকরণে প্রবাসীদের মতামতকে মূল্যায়ন করতে হবে। এই গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডে কেউ আর বিচ্ছিন্ন নয়, কারো মতামতকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, দেশ ছেড়েছি, অধিকার ছাড়িনি! দেশের প্রতিটি কর্মকান্ডে যেসব প্রবাসীরা অংশগ্রহণ করতে চায় তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে দেশ ও জাতির কল্যাণে।

সেই লক্ষ্যে প্রবাসীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে হলে তাদের প্রতি এয়ারপোর্টে ভাল ব্যবহার, লাগেজ হ্যান্ডেলে সর্বোচ্চ সতর্কতা, চুরি রোধ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাল আচরণের পাশাপাশি দূতাবাসগুলোতেও ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে। দেশ থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালের চক্র থেকে তাদেরকে বের করে আনতে হবে। প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে পারলে বিদেশে যেতে কেউ আর অর্থসম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে না।কোন পরিবারকে সব হারিয়ে পথে বসে যেতে হবে না। অর্থাৎ এই সেক্টরকে পরিপূর্ণভাবে জনবান্ধব করতে হলে দুর্নীতি ও প্রতারণামুক্ত করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ যে অধিকার প্রবাসী মানুষদের জন্য করতে হবে সেটা হচ্ছে তাদের ভোটাধিকার স্থাপন করতে হবে। এটাই প্রবাসীদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে রাজনীতিকদেরকে বাধ্য করবে। দেশের ১০ কোটি ভোটারের ১ কোটি যদি প্রবাসী হয় তবে ১০% ভোট দেশের নেতৃত্ব নির্বাচনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে তাদের মতামত ও ভোটকে হেলাফেলা না করে সকল মত, অভিমত এবং দ্বিমতকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য হবে সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের অনুসারীরা।

দেশের সকল মানুষের ভোটাধিকার পুনুরুদ্ধার করার লড়াই চলছে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বার বার হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। জনমানুষকে তোয়াক্কা না করে তাদের ভোটাধিকার হরণ করে একব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থবাদী ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছে মাফিয়া গোষ্ঠী। তাদের সেই উদ্দেশ্যকে বানচাল করে পুনরায় জনগণের হাতে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারার ক্ষমতা ফিরে পাবার ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার সুফল পেতে প্রবাসীদেরকে এই ভোট প্রয়োগের কর্মযজ্ঞে যুক্ত করার আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করার মানসিকতায় বলীয়ান হতে হবে প্রত্যেককে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রস্তাবাকারে প্রবাসীদের অধিকার এবং ভোটাধিকারের অভিধা, প্রস্তাব বাস্তবায়নের গুরুত্ব এবং চ্যালেন্জসমূহ উপস্থাপন করে কর্মপরিধি পরিকল্পনা করা আবশ্যক যাতে করে নির্বাচন সংস্কার কর্মকান্ডে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।

প্রবাসীদের ন্যায্য অধিকার বুঝে নেয়া এবং ভোটাধিকার পাওয়ার এই আন্দোলনে অংশগ্রহনের জন্য সকল প্রবাসী ভাই বোনদের যুক্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

Comments

Leave a Reply